শনিবার

০৯:৪১:১২

১৭ মে, ২০২৫

৩০ বৈশাখ, ১৪৩২

১৭ জিলকদ, ১৪৪৬

Edit Content

শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

  1. Home
  2. Lead
  3. পাকিস্তানকে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি নিউজিল্যান্ডের

ভোটের আগে নিবন্ধন চ্যালেঞ্জ, ইসির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় এনসিপি

অনলাইন ডেস্ক:

চলতি বছরের শেষ নাগাদ অথবা আগামী বছরে অনুষ্ঠিত হতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটের লড়াইকে সামনে রেখে গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থীরাও মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন। তবে এখনও নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেনি দলটি। চূড়ান্ত করা হয়নি দলীয় প্রতীকও। যদিও দলটি বিগত সরকারের করা আইন সংশোধন করে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে দলটির নেতারা আগামী সপ্তাহের মধ্যে ইসির সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বসবে বলে আভাস মিলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন রাজনৈতিক দলের জন্য ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আবেদনের সময়সীমা থাকলেও কমপক্ষে ৯০ দিন (তিন মাস) বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

এ প্রসঙ্গে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, আগামী সপ্তাহে আমরা ইসিতে যাব। নিবন্ধনসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে কথাবার্তা আছে। ২০ তারিখের আগেই যাব। অনেকগুলো শর্ত পূরণ করে আবেদন করতে হয়। এটার জন্য সময় লাগবে। সক্ষমতা থাকলেও সময়ের প্রয়োজন হয়। সময় নিয়ে আলোচনা করব। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, সংশোধনী বিষয় নিয়ে তারা কী ভাবছে? আর আরপিও সংশোধনীয় নিয়ে আলোচনা করব।

নির্বাচন কমিশনের যে আইন আছে, সে আইন অনুযায়ী আপনারা কি এই সঠিক সময়ের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তুষার বলেন, আমাদের সক্ষমতা আছে। তবে এটার জন্য সময় দরকার। এটা এক থেকে দেড় মাসে হয় না। সেটা নিয়ে আমরা কথা বলব। আর একটা দল তাদের গণবিজ্ঞপ্তির বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছে। ইসি তাদের জন্য শর্ত শিথিল করছে।

ইসি বলছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে নতুন দলটিকে বেশকিছু নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। নিবন্ধন সংক্রান্ত ধারা-উপধারাগুলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) রয়েছে। আরপিওর ধারা ৯০-এ নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পাওয়া এবং নিবন্ধন বাতিলের বিধান উল্লেখ রয়েছে। নিবন্ধনের জন্য এনসিপিকে ইসিতে দরখাস্ত দাখিল করতে হবে। দলের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরে তফসিলের ফরম কমিশন বরাবর দাখিল করতে হবে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে। পাঁচ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি ইসি সচিব বরাবর জমা দিতে হবে। এই ফি অ-ফেরতযোগ্য। পাঁচ হাজার টাকা সচিবের অনুকূলে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।

নতুন রাজনৈতিক দলের জন্য ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আবেদনের সময়সীমা থাকলেও কমপক্ষে তিন মাস বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছে এনসিপি / ঢাকা পোস্ট
জানা গেছে, কোনো দল দলীয় প্রতীক নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে প্রথমে নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করতে হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী, কোনো দল নিবন্ধন পেতে চাইলে তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হবে। এগুলো হচ্ছে— স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসনে বিজয়। সেসব নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা যেসব আসনে অংশ নিয়েছেন, সেসব আসনে মোট ভোটের ৫ শতাংশ অর্জন এবং কেন্দ্রীয় কমিটিসহ দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে। দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় কার্যালয় থাকতে হবে। আর অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় দলীয় কার্যালয় থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবেন।

এদিকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপি যাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধনের এসব শর্ত এনসিপির পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।

এনসিপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা আছে। সেই কমিটিগুলো জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা সেভাবে কাজ করছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দপ্তর ও ভোটারদের স্বাক্ষর সংগ্রহ কঠিন বিষয় নয়। তবে সব কাগজপত্র প্রস্তুত করতে একটু সময় লাগবে। আমাদের দুই মুখ্য সংগঠক প্রতিটি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সাংগঠনিকভাবে আমরা শিগগিরই বিভাগীয় সমন্বয়ক টিম গঠন করব।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, ইসিতে নিবন্ধনের যে কালো আইন, আমরা এই আইনের বাতিল দাবি করছি। ২০০৮ সালের আগে সবার জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত ছিল। সেভাবে করে দেওয়া উচিত। জনগণের প্রার্থিতার অধিকার হরণ করার অধিকার ইসির নেই। কেউ যদি প্রার্থী হতে চায় ইসির এই কালো আইন ধারা সম্ভব নয়। এরপরও যদি দল সিদ্ধান্ত নেয় যে ইসির এই আইনের অধীনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবে, নিতে পারে। তবে আমরা এখনো আবেদন করিনি।

তিনি আরও বলেন, প্রতীকের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হয়ত দল এটা নিয়ে আলোচনা করবে। কালো আইন বাতিল করলে নিবন্ধন সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। তখন আপনি ব্যক্তি হিসেবে প্রার্থী হতে পারবেন। কিন্তু এখন আপনি প্রার্থী হতে পারবেন না। কারণ, এখন আপনাকে পাঁচ শতাংশ ভোটারের কাছে যেতে হবে।

তিন মাস সময় বাড়ানোর জন্য ইসিতে এনসিপির লিখিত আবেদনে বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন একটি প্রতিবেদনসহ তাদের সুপারিশ কর্তৃপক্ষের কাছে দিলেও এখন পর্যন্ত মৌলিক সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। নির্বাচন কমিশনের মৌলিক সংস্কার এবং বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী না করেই বর্তমান ইসি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য গত ১০ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বা সংশোধন করে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়া দরকার। এ ছাড়া মৌলিক সংস্কারের আলোকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, বিদ্যমান নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন হালনাগাদ করাও আবশ্যক। এমন অবস্থায় দ্রুত নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত মৌলিক সংস্কার এবং নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা ৯০ দিন বাড়ানোর অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

অপরদিকে নতুন দলের নির্বাচনী প্রতীক কী হবে— তা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য চারটি প্রতীক নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে। এগুলো হলো- ‘মুষ্টিবদ্ধ হাত’, ‘হাতি’, ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ ও ‘ইলিশ’। এগুলোর মধ্যে ‘ইলিশ’ বাদে বাকি তিনটি প্রতীক বেশি সমর্থন পাচ্ছে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

এনসিপির মুখ্য সংগঠক সামান্তা শারমিন একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্কিত এমন একটি নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে তারা ভাবছেন, সেটা হতে পারে— দোয়াত কলম বা বই। আবার বিপ্লবের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু প্রতীক যেমন- মুষ্টিবদ্ধ হাত, এমন কিছু প্রস্তাবনাও এসেছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এ ছাড়া, আমাদের দেখতে হবে নির্বাচন কমিশনের কাছে কোন ধরনের প্রতীক এখনো রয়েছে।

প্রতীক প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, অনেকগুলো প্রতীক আমাদের বিবেচনার মধ্যে আছে। এখান থেকে আমরা একটা চূড়ান্ত করব।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। ওইদিন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলেও দ্রুত সময়ে ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ৪ মার্চ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং রায়েরবাজারে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শহীদদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন শুরু করে এনসিপি। এরপর নিয়মিত দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

আরও পড়ুন

Scroll to Top