শনিবার

১২:১৮:১৪

১৭ মে, ২০২৫

৩০ বৈশাখ, ১৪৩২

১৭ জিলকদ, ১৪৪৬

Edit Content

শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

  1. Home
  2. Lead
  3. পাকিস্তানকে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি নিউজিল্যান্ডের

প্রক্সি ভোটে জালিয়াতি, ঝুঁকি ও আস্থাহীনতা দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো

অনলাইন ডেস্ক:

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে প্রক্সি ভোট পদ্ধতি প্রয়োগের চিন্তা-ভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মঙ্গলবার একটি মতবিনিময় সভা করেছে কমিশন। সভায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের প্রাথমিক মতামত দিয়েছেন। চূড়ান্ত মতামত দলীয় ফোরামে আলোচনার পর দেওয়া হবে বলে জানান তারা।

প্রাথমিকভাবে প্রক্সি ভোটকেই প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া হিসেবে না নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন এ প্রক্রিয়ায় ভোট প্রয়োগে জালিয়াতির সুযোগ থেকে যেতে পারে। এ নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনা ও যাচাই-বাছাইয়ের পক্ষে তারা। নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দলগুলো বলছে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ও জনগণের আস্থার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে প্রবাসীদের ভোট নিয়ে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ২১ দলের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলামের খানের নেতৃত্বে দলের নেতা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স অংশ নেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, তার দল প্রবাসীদের ভোটের পক্ষে হলেও বিস্তারিত মতামত জানাবেন দলীয় ফোরামে আলোচনার পর।

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বেশ আগ্রহ দেখছি। ইসির কাছে আমাদের প্রত্যাশা যেন অর্ধেক না, পরিপূর্ণ এফোর্ট দিয়ে তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারে। প্রক্সি ভোট হলে কোথাও কোথাও বেশি ভোট আসতে পারে। সেক্ষেত্রে এটা একটা থ্রেট হতে পারে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ইসিকে পূর্ণ মতামত জানাব।

তিনি আরও বলেন, ভোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো ট্রাস্ট। এটা বজায় রাখতে হবে। সবার যাতে ট্রাস্ট থাকে অনলাইন হোক, পোস্টাল হোক। প্রক্সি নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। সেটা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে জানাব।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, উদ্যোগ নিলেই অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। এটি ভালো উদ্যোগ। ট্রায়াল অ্যান্ড এররের মধ্যদিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমরা ইসির সঙ্গে বৈঠকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি এনেছিলাম। ইসি সেই উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে গত ১৫ বছরে। ইসির প্রতি ট্রাস্ট অ্যান্ড কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলেছে মানুষ।

তিনি আরও বলেন, এক্স একজনকে পছন্দ করে, ওয়াই আরেকজনকে পছন্দ করে। তাহলে এক্স-এর প্রক্সি যদি ওয়াইকে দেওয়া হয় তাহলে ভোটারের রায়ের সঠিক প্রতিফলন হবে না। তবে দলীয় ফোরামে আলোচনার পর পরবর্তীতে আবার মতামত দেওয়া হবে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে। কোনো অবস্থাতেই সিস্টেমকে ডেসট্রয় করা যাবে না।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব। দুই কোটি ভোটার রয়েছে। মানুষের জন্য সুবিধা হয়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেভাবে দিতে হবে। প্রক্সি ভোটে দেখেছি যেটা, আমার মা একটি দলকে ভোট দেয়। আমার বাবা আরেকটি দলকে ভোট দেয়। এক্ষেত্রে প্রক্সির মাধ্যমে কী করে সিকিউরিটি নিশ্চিত করা যায়, সেটা ভেবে দেখতে হবে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আব্বাস ইসলাম খান বলেন, মিডেল-ইস্টের প্রবাসীদের এনআইডি আছে। কিন্তু ওয়েস্টের (পশ্চিমা দেশে) বেশিরভাগেরই পাসপোর্ট নেই। তারা মিশনে গিয়ে কেন এনআইডি নেবে। কাজেই পাসপোর্ট দিয়েও যেন ভোটের অপশন রাখা হয়।

তিনি বলেন, এনআইডির ডেটা নিরাপত্তা দিতে পারিনি। তাই অনলাইন ভোটিংয়ে পাবলিক ট্রাস্ট নিয়ে আসতে হবে। কেননা, প্রক্রিয়া শুরু করে সিকিউরিটি দিতে না পারলে বন্ধ হয়ে যাবে। অনলাইনে যেহেতু হ্যাক করা যায়, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার আসলে কী হবে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া প্রক্সি ভোট বাংলাদেশের জন্য খুব রিস্কি। উন্নত বিশ্ব যেখানে পারছে না, আমরা নাগরিকরা যেখানে সত্যিকার নাগরিক হতে পারিনি এখনো, সেখানে দলগুলো কিন্তু ফাঁকফোকর বের করে ফেলবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম মেম্বার কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, অনলাইন, প্রক্সি ও পোস্টাল; তিনটি পদ্ধতিরই সুবিধা অসুবিধা আছে। তবে দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, প্রবাসে দেড় কোটি ভোটার, এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে আছে। তাই সতর্কতার সাথে আরও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। তাই ইসির উচিত দলগুলোকে আস্থায় এনে যেন কাজ করে।

এদিকে সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রধান আবু লায়েন্স মুন্না বলেন, তার দল প্রক্সি ভোটিংয়ের পক্ষে নয়। বাংলাদেশ জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহজাহান আলী সাজু বলেন, তার দলও ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাবে। তবে তারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মডেল নির্বাচন হিসেবে দেখতে চায়।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের অতিরিক্ত মহাসচিব আকবর হোসেন পাঠান বলেন, প্রবাসীদের ভোট নেন, তবে আগে দেশের ভেতরে ভোট সুষ্ঠু করেন। দলটির সভাপতি কাজী আবুল খায়ের বলেন, প্রবাসীদের ভোটিং ব্যবস্থা নির্ধারণের পূর্বে দলগুলোর একমত হতে হবে যে ভুল হলেও মেনে নেবো।

নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন ভুল না হয়। আস্থা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি।

এছাড়া বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, তার দল প্রক্সি ভোটের পক্ষে। অনলাইন ভোটিং নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, আর পোস্টাল ব্যালট নিয়ে আগ্রহ নেই।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ বলেছে, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত দেবে। বাংলাদেশ কংগ্রেস পরে বিস্তারিত মতামত দেওয়ার কথা বললেও জালিয়াতির সুযোগ থাকায় প্রক্সি ভোটের বিপক্ষে দলটি।

মতবিনিময় সভায় অনিবন্ধিত দলের মধ্যে জামায়াতের অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন, মতিউর রহমান আকন্দসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া নিবন্ধিত দলের মধ্যে এলডিপি, সিপিবি, জেএসডি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিত, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ জাসদ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি প্রতিনিধিসহ গণমাধ্যম, কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট পদ্ধতি নিয়ে গত ৮ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমআইএসটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও এমআইএসটি নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি তিনটি ভোটিং পদ্ধতির ওপর তিনটি প্রতিবেদন তৈরি করে। যে প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপনার পর সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন অংশীজনরা।

আরও পড়ুন

Scroll to Top